চাঁদ, মেঘ, বৃষ্টি ও তুমি

আজ রাতে হঠাৎই বৃষ্টি হলো তাও
গভীর রাতে গতকাল রাতেও
বৃষ্টি হয়েছিল তাই
কথা বলতে পারবো না যে অনেকদিন পর
বৃষ্টি হলো তবে আজ সারাদিনের দয়া-
মায়াহীন, কঠোর নিষ্ঠুর রোদের পর
রাতে বৃষ্টি হওয়াটা বেশ আনন্দেরই
আর বৃষ্টি শুরুর আগে বাইরের
দমকা হাওয়া এবং আকাশে উড়ে চলা মেঘ
চাঁদের লুকোচুরি যারা ঢাকায় থেকেও
দেখেনি তারা তো দূর্ভাগা চাঁদের এই
অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে করতে কখন
যে নিজেকে মহাকাশচারীরূপে কল্পনা করা শুরু
করে দিলাম টেরই পেলাম না
শিমন, প্রথম
কোনো বাংলাদেশি হিমালয়ের চূড়ায়
পা রাখাতেই দেশব্যাপী বেশ
সাড়া পড়ে গেছিল এবার আপনি প্রথম
বাংলাদেশি হিসেবে চন্দ্রপৃষ্ঠে যাচ্ছেন
আপনার অনুভূতি কী?’
খেয়াল করলাম প্রশ্নটা একজন করলেও
আমার সামনে প্রায় দশ-পনেরো জন
সাংবাদিক আর অনেকগুলো ক্যামেরা
আমি বললাম, ‘আমি খুবই আনন্দিত,
এক্সাইটেড এই মুহুর্তে এর বেশি কিছু
বলতে পারছি না
সাংবাদিকরাও খুব
বেশি ঝামেলা পাকালো না আমি দেশ
ছাড়লাম নাসার অভিযানের ঠিক পূর্ব
মুহুর্তে একটি সংবাদ সম্মেলনের
আয়োজন করা হয়েছে সংবাদ
সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল
পৃথিবী ছাড়ার আগে কিছু
কথা বলে নেয়া আমি মাইক্রোফোনের
সামনে দাঁড়িয়ে কী সব
হাবিজাবি বললাম যখন বিদায়
নিতে যাবো, তখন কেউ একজন জিজ্ঞেস
করলো, আমি চন্দ্রপৃষ্ঠে বিশেষ কিছু
করতে যাচ্ছি কি না এই
প্রশ্নটা শোনার পর মনে পড়লো গোপন
পরিকল্পনার কথা
সবাইকে জানিয়ে দেবো কি না কিছুক্ষণ
ভাবলাম পরে ঠিক করলাম, একটু আভাস
দিয়ে যাই
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, অনেক স্পেশাল
একটা কিছু করতে যাচ্ছি
সেটা কী রকম?’
আমি চন্দ্রপৃষ্ঠে একজনের নাম
লিখে আসার পরিকল্পনা করেছি
উপস্থিত সবার মধ্যে কেমন যেন
একটা গুঞ্জন উঠে গেল কেউ কেউ
ফিসফিস করে আপন মনেই জিজ্ঞেস
করতে থাকলো কার নাম
লিখতে যাচ্ছি আমি অবশেষে একজন
জিজ্ঞেসই করে ফেলল
কার নাম?’
এই প্রশ্নের উত্তর দিলাম না বললাম,
চাঁদে তার নাম লিখবো আর সেটার
ছবিও তুলবো সেই ছবিটাই হবে প্রমাণ
যে চাঁদে আমি তার নাম
লিখে রেখে এসেছি তবে কার নাম
লিখতে যাচ্ছি,
সেটা ফিরে এসে বলবোকণ্ঠস্বর ক্ষীণ
করে বললাম, ‘যদি ফিরে আসতে পারি

আজ একটি বিশেষ দিন সফল
চন্দ্রাভিযান শেষে নাসা
মহাকাশযান পৃথিবীতে অবতরণ করেছে
অবতরণের পরপরই আমি ল্যাপটপ
নিয়ে বসে প্রথমে ফেসবুক আর
টুইটারে একটি স্ট্যাটাস আপডেট
করলাম বিশ্বকে জানিয়ে দিলাম,
আমার নাম লেখার পরিকল্পনা সফল
এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম
তারপর অনেকদিন আগের একটা প্যাড আর
কলম নিয়ে বসলাম
একজনকে একটা চিঠি লিখবো
চিঠি লেখার ফ্যাশন অনেক পুরনো হলেও
আজও চিঠির সঙ্গে মিশে থাকে মমতা,
প্রিয়জনের স্পর্শ, যা এসএমএস
বা ইমেইলে কখনোই পাওয়া সম্ভব নয়

একটা সময় ছিল, যখন আমি খুব
একা থাকতাম স্কুলের কয়েকজন বন্ধু
ছাড়া মেশামেশার মতো তেমন কেউ ছিল
না বেশিরভাগ সময়ই বাসায় কাটতো
মাঝে মাঝে একাই ঘুরতে যেতাম স্কুল
জীবনটা আমার একটু অন্যরকম
কেটেছে অনেকটা আনমনা হয়ে
একাকীত্বের সাথে
স্কুলের সেই একাকীত্ব
জীবনটাকে আমি দারুণ মিস করি কারণ,
সেই একাকীত্বের মাঝেই তুমি ছিলে
সেই একাকীত্ব ছিল অন্যরকম
একাকীত্ব আমি একা থাকতাম, কিন্তু
সবসময়ই মনে হতো তুমি আমার
পাশে আছো, আমার উপর নজর রাখছো
সবসময়ই মনে হতো এক
বেলা না খেলে তুমি আচ্ছামতো বকবে,
কারণ
তুমি আমাকে প্রতিটা মুহুর্তে দেখছো
অথচ তুমি ছিলে অনেক দূরে তবুও
তুমি ঠিকই আমাকে দেখতে ঠিক সেই
চোখ দিয়েই আমাকে দেখতে, যেই চোখ
দিয়ে আমিও তোমাকে দেখি যেই চোখ
অন্য কোনো চোখে ধরা পড়ে না যেই
চোখকে হয়তো বলে ভালোবাসার চোখ
আজও আমার মনে রঙিন
হয়ে আছে তোমাকে নিয়ে দেখা প্রতিটা স্বপ্ন
কীভাবে যেন তোমার আর আমার সব
স্বপ্ন, সব পরিকল্পনা মিলে যেত আমার
খুব অবাক লাগতো তাহলে কি অদৃষ্টই
তোমাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিল?
যদি অদৃষ্টই এনে তাকে, তাহলে সেই
অদৃষ্টই আবার তোমাকে ফিরিয়ে নিল
অদৃষ্টের বিরুদ্ধে তো কিছু করা যায়
না তাই সেই তুমি একসময়
দূরে সরে যাবার পর দীর্ঘশ্বাস
ফেলা ছাড়া কিছু করার ছিল না আমার
তোমার মুখে যখন
শুনেছি যে তুমি আমাকে ছাড়া সুখী থাকবে,
তখন আমি আর কিছু বলতে পারিনি
হাজার হোক, তোমাকে ভালোবাসি
তোমাকে সুখী দেখতে যে আনন্দ রয়েছে,
তোমাকে কাছে পাওয়ায়ও সেই আনন্দ
নেই
আজ তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো,
কী করছো, কিছুই জানি না আমি
এতগুলো বছর পরও তোমাকে সেই
সেদিনের মতোই ভালোবেসে যাচ্ছি,
অথচ তুমি কোথায় আছো, কেমন আছো কিছুই
জানি না মনে আছে তোমাকে একদিন
আমি বলেছিলাম যে, তুমি এক
টুকরো চাঁদ,
যা সৃষ্টিকর্তা আমাকে উপহার
দিয়েছেন?
তুমি হয়তো সস্তা বাংলা ডায়ালগ
ভেবেছিলে কিন্তু আমি কথাটা মন
থেকে বলেছিলাম আর সময় সুযোগ
আসামাত্রই সেই কথার প্রমাণ করতে ভুল
করিনি
তুমি আজ বা ভবিষ্যতে পৃথিবীর যেই
প্রান্তে, যে শহরেই থাকো না কেন,
প্রতিমাসেই নির্দিষ্ট টা দিন
আকাশের দিকে তাকালে চাঁদের
দেখা পাবে তোমাকে খুব
জানাতে ইচ্ছে করছে, এক
টুকরো চাঁদে তোমার নাম লেখা রয়েছে
যখনই আকাশে চাঁদ দেখবে,
মনে করবে যে চাঁদে তুমি রয়েছ
এটা তোমাকে কল্পনা করতে বলছি না;
বরং এটাই সত্যি!”

চিঠিটা লেখা শেষ করে কয়েকবার
রিভিশন দিলাম কোথাও
ভুলত্রুটি আছে কি না দেখলাম তারপর
চাদের বুকে লিখে আসা ওর নামের
ছবিটা স্ট্যাপলিং করে জুড়ে দিলাম
কিছুক্ষণ আনমনে হাসলাম কিন্তু
মিনিট দশেক যেতেই সবকিছু
অতিমাত্রায় নাটকীয় লাগলো
মনে পড়লো, আমি ভুলে গিয়েছিলাম
যে আমার প্রতি ওর আর সেই টান নেই
যেই মমতা, ভালোবাসা, আবেগ
নিয়ে আমি লিখেছি, সবই ওর
কাছে গিয়ে হয়ে যাবেবাড়াবাড়ি
তাই ভাঁজ করা চিঠিটা রেখে দিলাম
এক গাদা বইয়ের আড়ালে নিঃসঙ্গ
আমার স্থান হলো জানালার পাশে

বৃষ্টির ফোঁটায় কল্পনার অবসান হলো
বাতাসের বেগ বেড়েছে অনেক ঝড়
আসবে, বোঝা যাচ্ছে বিদ্যুৎ
চমকাচ্ছে অনেক আমি ঘরে ঢুকে দরজা-
জানালা লাগিয়ে দিলাম কিছু কাজ
ছিল, কিন্তু কাজে মন বসাতে পারলাম
না শেষে বাধ্য হয়ে শুয়ে পড়লাম
ততক্ষণে বাইরে ঢল নেমেছে টিনের
চালে বৃষ্টি পড়ার তুমুল শব্দ
আমি কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির
শব্দ শুনতে থাকলাম বৃষ্টি নিয়েও
অনেক স্বপ্ন ছিল আমার, যার কোনোটাই
আর কোনোদিন পূরণ হবে না
মানুষ বৃষ্টির সঙ্গে ভালোবাসাকে কেন
জড়িয়ে ফেলে, তা আজও বুঝতে পারলাম
না
(সংগৃহীত)
  • Facebook Comment