প্রেমের কাহিনী



সময় তখন আশির দশক । দেশের পরিস্থিতি তখন কিছুটা সহনশীল । এক ছেলে তখন রাজবাড়ীতে পড়াশুনা করতো । সে যে বাসায় থাকতো তার পাশের বাসায় একটা ফ্যামিলি বাসা ছিল । সেই বাসায় থাকতো এক নব দম্পত্তি আর সেই গৃহ বধূটির ছোট বোন । যার রুমের জানলা ছিল সেই ছেলেটির রুমের জানলা বরাবর । তো সেই জানলা দুটি দিয়ে ছেলে মেয়ে দুটি প্রায় একজন আরেকজনকে দেখতে পেতো । কিন্তু কেউ কখনো কাউকে কিছু বলতে পারতো না ।
এভাবে দেখা হতে হতে তাদের দুজনের ভিতর একটা মনের টান এসে যায় । তখন এমন অবস্থা হয়ে যায় যে একদিন যদি তারা একজন আরেক জনকে না দেখতো তো তাদের দিনটা যেন মাটি হয়ে যেতো । সব কিছু কেমন যেন থেমে যেতো । কিন্তু কেন এমন হতো তা তারা কেউ বুঝতে পারতো না । এভাবে অনেকটা সময় পার হয়ে যায় । কিন্তু তাদের সেই জানলা দিয়ে দেখা না বলা ভালোবাসাটা চলতেই থাকে । একদিন ছেলেটির বাবা তার বাসায় ছেলের খোঁজ খবর নিতে আসেন । ছেলেটি তার বাবার সাথে কথা বলে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে যায় । তখন ছেলেটির বাবা লক্ষ্য করলেন পাশের বাসা থেকে একটি মেয়ে বার বার জানলা দিয়ে এদিকে উকি ঝুকি মারছে । মেয়েটিকে দেখে ছেলেটির বাবার খুব পছন্দ হয়ে গেলো । কিন্তু তিনি তাকে কিছুই বললেন না । এমন কি ছেলে আসলে ছেলেকেও কিছু জিজ্ঞেস করলেন না এই ব্যাপারে । বাবা পরের দিন চলে গেলেন । আর এদিকে আবার আগের মত ছেলে এবং মেয়েটির জানালা প্রেম চলতেই থাকলো ।
হথাত একদিন সকাল বেলা জানলা দিয়ে কিছু একটা এসে ছেলেটির মাথায় জোরে আঘাত করলো ।ছেলেটি মাথা ডলতে ডলতে দেখে একটি মোড়ানো কাগজ । ছেলেটি কাগজটা খুলে দেখে তাতে কিছু লেখা । সে কাগজটি নিয়ে জানালার বাইরে তাকায় ।
দেখে পাশের বাসার মেয়েটি জানালা থেকে সরে গেল । ছেলেটি এবার কাগজটি পড়া শুরু করলো । তাতে লেখা ছিল পাশের বাসার মেয়েটির বাড়ীর ঠিকানা । কারন সে সেদিন বিকালে তার বোনের বাসা থেকে বাবার বাসায় চলে যাচ্ছিলো । তাই যাওয়ার আগে সে তার ঠিকানা দিয়ে গেলো যাতে ছেলেটি তাকে চিঠি লিখতে পারে । এবার তাদের প্রেম কাহিনী নতুন মোড় পেল । ছেলে মেয়ে দুটি পরস্পরকে চিঠির মাধ্যমে তাদের মনের অনুভুতি জানাতে লাগলো । এভাবে চলতে লাগলো তাদের চিঠি প্রেম । বেশ ভালোই চলছিলো এভাবে । কিন্তু একদিন ছেলেটির কাছে মেয়েটির একটি চিঠি আসলো । যাতে লিখা ছিল মেয়েটির বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে ।আর সে কোন ভাবেই তার ফ্যামিলিকে তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে রাজি করাতে পারিনি । তাই ছেলেটি যেন তাকে ভুলে যায় । আর সব ভুলে যেন নতুন করে জীবন শুরু করে । এই চিঠি দেখে ছেলেটি তখনি মেয়েটির বাড়ী যাওয়ার জন্য বের হল । কিন্তু দরজা খুলে দেখে সেখানে তার ছোট ভাই দাঁড়ানো । সে তার ভাইকে দেখে অবাক হয়ে যায় । সে তার ভাইকে আসার কারন জিজ্ঞাসা করলে সে শুধু বলে সে তাকে বাড়ীতে নিয়ে যাবার জন্য এসেছে । এই কথা শুনে ছেলেটির মনে ভয় ঢুকে যায় । বাড়ীতে কোন অঘটন হলো নাতো । সে সব ভুলে তার ভাইকে নিয়ে বাড়ীতে চলে যায় । বাড়ীতে গিয়ে সে অবাক হয়ে যায় । আত্মীয় স্বজনে বাড়ি পুরো ভর্তি । পুরো বাড়ীতে সাজ সাজ রব । কি হচ্ছে কি । তখন তার বাবা সামনে আসে । এসে বলে তার মানে ছেলেটির বিয়ে ঠিক হয়েছে । আর সবাই এসেছে তাতে অংশ নিতে । ছেলেটি কিছু বলতে পারে না । কারন সে যা হারানোর তাতো হারিয়ে ফেলেছে । তাই সে তার বাবার কথার অবাধ্য হতে পারলো না , কিন্তু তার মনকে সে কোন ভাবেই ঠিক রাখতে পারছিলো না । এভাবে সে বিয়ে করতে গেল ।
কিন্তু ওপরওয়ালা মনে হয় তখন ছেলেটিকে নিয়ে রসিকতায় মেতে উঠেছিলেন । কারন শুভ দৃষ্টির সময় ছেলেটি দেখতে পেলো কনে বেশে সেই মেয়েটি বসা যাকে সে এতোদিন ভালবেসেছে । সে তো পুরো অবাক । আর মেয়েটিও ছেলেটিকে দেখে মূর্ছা যায় আরকি । তখন ছেলে আর মেয়ের বাবা তাদের সামনে এসে সব কথা খুলে বলেন । ছেলের বাসার জানলা দিয়ে মেয়েটিকে দেখার পর থেকে ছেলেটির বাবা তাকে পুত্র বধু হিসেবে খুব পছন্দ করেন । তাই তিনি ছেলেটিকে না জানিয়ে আবার রাজবাড়ি আসেন । সেই মেয়ের ভগ্নীপতির সাথে দেখা করেন । যা মেয়েটিও জানতো না । তারপর আর কি । ভগ্নীপতির মাধ্যমে মেয়ের বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান । আর সব শুনে মেয়ের বাবাও বিয়ে তে অমত করেননি । কিন্তু ঠিক হয় ছেলে বা মেয়ে কাউকেই কিছু জানানো হবে না । তারপর আর কি । মহা ধুমধামের সাথে বিয়ে হয়ে যায় ছেলে আর মেয়েটির । পূর্ণতা পায় তাদের এতোদিনকার ভালোবাসা । তারপর থেকে তারা সুখে শান্তিতে সবাইকে নিয়ে ঘর সংসার করতে থাকে । আর তাদের কোল জুড়ে আসে এক ফুটফুটে রাজপুত্র । যাকে নিয়ে তাদের পথ চলা শুরু হয় । যাকে পেয়ে তাদের পরিবার যেন পুর্ন হয়ে যায় । রাজা রানী আর আর তাদের রাজপুত্র । ছোট সুন্দর সুখি পরিবার ।
  • Facebook Comment