একালের ভালবাসা



অনিকের সাথে লিজার প্রেমের
সম্পর্ক ৬ মাস পেরিয়ে গেছে।
লিজা খুবই ধনী পরিবারের মেয়ে।
আর খুবই স্মার্ট। অনেক হাই
ক্লাসের ছেলেরাও মাঝে মধ্যে ওর
সাথে মিশতে গিয়ে হিমশিম খায়।
তাদের তুলনায় অনিক
বলা চলে কিছুই নয়। কারন
সে গ্রামের ছেলে। তবুও
কিভাবে যে এই দুজনের
মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক
গড়ে উঠেছে তাদের কাছের বন্ধু-
বান্ধবরাও বুঝে উঠতে পারেনা।
তারা দুজনেই দেশের
একটা স্বনামধন্য কলেজে দ্বিতীয়
বর্ষে পড়ে। কিছুদিন
আগে তারা পহেলা বৈশাখে অনেক
ঘুরাফেরা করেছে, অনেক
মজা করেছে। যদিও পয়সার
যোগানটা বেশিরভাগ সময় লিজাই
দেয়।
...
পরদিন ১৫ই
ফেব্রুয়ারি সকালে তাদের
কলেজে দেখা হয়খুব সুন্দর
করে সেজে সে কলেজে গিয়েছিল।
সেদিন সে কলেজ ছুটির পর বাসায়
ফিরতে ফিরতে ...
-
এই অনিক, একটা কথা শুনবা?
-
কি কথা বলো।
-
আজকে বিকালে আমার বাসায় একটু
আসতে পারবা?
কথাটা বলার সময় কাজল
দেয়া টানা টানা চোখে একটা অদ্ভুত
ভঙ্গিতে অনিকের দিকে তাকায় সে।
সে চোখে সমুদ্রের অথই জলরাশির
সমান আঁকুতি খুঁজে পায় অনিক।
সে আঁকুতিতে অনেকটা বিমোহিত
হয়েই উত্তর দেয় আনিক
-
তুমি যখন বলেছ, তখন তো তোমার
বাবার বন্দুকের
গুলি খেতে তো নিশ্চয়ই আসতে হবে।
-
সব সময় ফাজলামো করা ছাড়োতো।
আজকে বাসায় কেউ নেই।বাবা ব্যবসার কাজে চিটাগাং গেছে। মা ছোট
খলামনির বাসায় গেছে। বাসায়
আছি কেবল আমি আর কাজের
মেয়ে শেফালি। আশা করি তোমার
আসতে এখন আর কোন
অসুবিধা হবেনা।
-
ঠিক আছে মহারানী, আমি আসব।
কখন আসবো বলো?
-
ঢং দেখে বাঁচিনা। বিকেল ৪টায়
আসলেই হবে।
-
জো হুকুম মহারানী।
-
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন
মেসে যাও আর বিকেলে সময় মত এস
দয়া করে। তোমার জন্য
একটা সারপ্রাইজ আছে।
-
আচ্ছা ঠিক আছে।
বলেই মেসের দিকে পা বাড়ায়
অনিক। আর ভাবতে থাকে। কি এমন
সারপ্রাইজ আছে?
...
সোজা ৪টার সময় কিছু ফুল
নিয়ে লিজার বাসার
কলিং বেলে টিপ দেয় অনিক।
কিছুক্ষন পর
এসে দরজা খোলে শেফালি।
-
ভাইজান ভেতরে যান।
বলেই কোথায় যেন চলে যায় সে।
অনিক বাসার ভেতরে গিয়ে লিজার
খোঁজ করতে থাকে। অবশেষে লিজার
বেডরুমে লিজাকে খুঁজে পায় অনিক।
অদ্ভুত সুন্দর ডিজাইনের
একটা মেক্সি পড়ে শুয়ে আছে লিজা।
অনিককে দেখে উঠে বসে সে।
-
কখন আসলা?
বলল লিজা।
-
এইতো, এইমাত্র।
-
কিছু খাবা?
-
নাহ। এখন কিছু
খেতে ইচ্ছে করছেনা।
-
কিছু না খাইলা,
টিভি দেখতে থাকো তুমি।
ততক্ষণে আমি একটু বাথরুম
থেকে আসি।
টিভিটা অন করে বাথরুমে চলে যায়
লিজা। টিভিটার স্ক্রিনের
দিকে তাকিয়ে অনিক কিছুটা অবাক
হল। এসব কি দেখায় টিভিতে? আর
লিজাও তাহলে এই চ্যানেলটাই
শুয়ে শুয়ে দেখছিল? মাথাটার
মধ্যে হঠাৎ কেন জানি চিনচিন
করে ওঠে অনিকের চ্যানেল
টা পাল্টিয়ে খাটের সাথে হেলান
দেয়ার জন্য বালিশটা টান দেয়
সে। কিন্তু বালিশের নিচ
থেকে এসব কি বেরিয়ে এল??
দেখে আরও অবাক হয় অনিক।
বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে গায়ে একটু
সুগন্ধি মেখে এসে অনিকের
সামনে দাঁড়ায় লিজা। চোখে তার
অস্পষ্ট ভাষা। সে ভাষা কিছুতেই
বুঝে উঠতে পারেনা অনিক।
-
এসব কি লিজা?
বালিশের নিচ
থেকে পাওয়া জিনিষগুলো লিজার
দিকে ধরে লিজাকে প্রশ্ন
করে অনিক।
-
এগুলা চিননা নাকি?
বলেই একটা রহস্যঘন
মুচকি হাসি দেয় লিজা।
-
খুব ভাল করেই চিনি। কিন্তু
এগুলা তোমার ঘরে কিজন্য?
-
আমাদের সেফটির জন্য।
যাতে কোন ভুল না হয়ে যায় সেজন্য।
-
মানে?
-
মানে টা কি বুঝতে পারছোনা?
-
তুমি, তুমি এইটা কি বলো?
আমাদের তো এখনো বিয়েই হয়নি।
আর বিয়ের আগে এসব করা মোটেই
ঠিক না। আমি আসছি।
-
আরে সাহেব যাও কই?
তোকে সারপ্রাইজ দিব বলছিলাম
না?
-
হ্যা ...
-
এটাই সেই সারপ্রাইজ। যা সব
প্রেমিকরাই তাদের প্রেমিকাদের
কাছে আশা করে।
-
কিন্তু আমি তো তোমার কাছে এই
ধরনের সারপ্রাইজ আশা করিনি?
-
আহ... বাজে বকোনা তো।
আসোনা আমরা আজ হারিয়ে যাই
সুখের রাজ্যে। প্লিজ....
-
তোমার কি মরনের ভয় নাই?
-
কখন যে কি বলোনা তুমি? মরনের
ভয় থাকবেনা কেন? অবশ্যই আছে।
-
থাকলে এমন একটা বাজে প্রপোজ
তুমি আমাকে করতা না?
-
এটাকে বাজে প্রপোজ বলো কেন?
এখনকার সব লাভাররাই তো এমন
করে।
-
সবাই করলেও আমার
দ্বারা এটা কিছুতেই করা সম্ভব
না।
-
কেন? তুমি কি হিজরা?
-
কি বললা তুমি? তুমি জান
এটা করা কত বড় একটা ভুল হবে?
-
আমি অতশত বুঝিনা। আমার
সাথে এই কাজটা করতে হবে ব্যস।
-
সরি। তুমি কি সত্যিই
আমাকে চাও?
-
হ্যা চাই, পাগলের মত
তোমাকে চাই।
-
তাহলে প্লিজ আমাকে আর
কখনো এমন বাজে প্রপোজ করবানা।
কারন আমি প্লেবয় না।
আমি সচ্চরিত্রের অধিকারী।
আমি আসছি।
কথাগুলো বলেই হনহনিয়ে লিজাদের
বাসা থেকে বেরিয়ে যায় সে।
মেসে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।
এ কান্না যেন আর শেষ হয়না। মন
ভেঙে যায় অনিকের। অনিক
চেয়েছিল যৌনতা বিহীন পবিত্র
একটি ভালবাসা করতে। কিন্তু
সে তা পারেনি। সে ভাবে, হয়ত
এভাবেই হয় একালের
শহুরে ভালবাসা। হয়ত একেই
বলে এ যুগের প্রেম ।।
  • Facebook Comment